দামেশক এর সিদনায়া প্রিজনে কিভাবে অত্যাচার করা হতো গত দুই পর্বে অনেকগুলো পদ্ধতির বর্ণনা দিয়েছিলাম। (যারা দেখেননি,কমেন্টবক্স থেকে দেখে নিবেন)
এই পর্বে আরো কিছু অত্যাচারের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিবরণ দিলাম,পড়ার সময় চিন্তা করবেন, সুন্নী মুসলিম হওয়াটা কত বড় অপরাধ হিসেবে কাউন্ট করা হতো আসাদ রেজিমের কাছে। আর লেখাটা পড়ার সময় কয়েদীর জায়গায় নিজেকে রেখে কয়েদীদের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন।
[১]
গত পর্বে Thermal Torture এর বিবরণ দিয়েছিলাম। কিন্তু একটা ধরন মিস গিয়েছিল। এই পর্বে সেটা উল্লেখ করছি।
প্রথম ছবিতে thermal torture এর যে ধরন টা দেখছেন সেটা হলো, নাইলন ব্যাগ পুড়িয়ে অত্যাচার এর একটা ধরন।
নাইলন ব্যাগ জ্বালিয়ে তা গলিয়ে বন্দীর শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন বুকে, পেটে, পিঠে, পা এবং হাতে প্রয়োগ করা হতো। এবং এগুলো দিয়ে শরীরে নিভানো হতো।
নাইলন ব্যাগের এই অত্যাচারের ধরনের ক্ষেত্রে দুইটা ক্ষতি ছিলো। প্রথমটা তো হল স্কিন ড্যামেজ। দ্বিতীয়ত যেসব ক্ষতি ছিলো তা হলো, চোখ,নাক,গলা জ্বলতো,শ্বাস নিতে সমস্যা হতো। এছাড়াও নাইলন পোড়ানোর কারণে যে ধোঁয়া বের হতো এতে মাথা ঘোরানোর মতো অবস্থা হতো। এবং নাইলন যখন High Temperature এ পোড়ানো হতো তখন এর দীর্ঘ মেয়াদী সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সার এবং কিডনি ফেইলিউর এর মতো জটিলতা দেখা দিতো।
[২]
২য় ছবিতে যে পদ্ধতি টা দেখছেন সেই পদ্ধতির নাম ❝Cold water torture method❞
এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদের সময় অথবা যখন কয়েদী সেলে থাকতো তখন। নিরাপত্তাকর্মীরা হঠাৎ করে বন্দীর ওপর ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারতো বিশেষ করে মাথার দিকে লক্ষ্য রেখে অথবা পুরো শরীরে এলোমেলোভাবে। অত্যাচারের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, কয়েদীকে কাপড় ছাড়াই রাখা হতো, যা তার শরীরের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতো।
ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারার ফলে কয়েদী হঠাৎ করে শক অনুভব করতো এছাড়াও কাঁপুনি এবং ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা ভোগ করতো। এই পদ্ধতি সাধারণত শীতকালে ব্যবহার করা হতো, যার কারণে বন্দী আরও বেশি ঠান্ডার কষ্ট ভোগ করতো। কয়েদীকে কোনো জামা কাপড় ছাড়াই ফেলে রাখা হতো,সেলের ঠান্ডা পরিবেশ এবং ঠান্ডা পানির কারণে আরো যন্ত্রণা ভোগ করতো।
[৩]
৩য় এবং ৪র্থ ছবিতে যে পদ্ধতিগুলো দেখছেন সেই অত্যাচারের পদ্ধতির নাম ❝Electric-shock torture method❞. এই পদ্ধতির ই দুইটা ধরন এখানে দেখানো হয়েছে।
৩য় ছবিটার পদ্ধতি সারাবিশ্বেই পরিচিত,ইলেক্ট্রিক চেয়ার বসিয়ে শক দেওয়া। এই ক্ষেত্রে, কয়েদীকে একটি লোহার চেয়ারে বসতে বাধ্য করা হতো এবং তাকে খুবই শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হতো। এরপর চেয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হতো, যা কয়েদীর পুরো শরীরকে বিদ্যুতায়িত করে ফেলতো। বিদ্যুৎ শকের মাধ্যমে নির্যাতন বন্দীর নার্ভ সিস্টেম ড্যামেজ করে ফেলতো, যার ফলে শরীর কাঁপতো এবং স্থায়ী মাথাব্যথা হতো। ইলেক্ট্রিসিটির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ডিগ্রির বার্ন করা হতো।
চিন্তা করে দেখুন তো,আপনাকে সেই চেয়ারে বসিয়ে এমন যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত দেওয়া হলে কেমন অনুভব হবে?
[৪]
৪র্থ ছবিতে যে পদ্ধতিটা দেখছেন তা হলো Electric-shock torture এর আরেকটা ধরন। এই ক্ষেত্রে Electric shock দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো Electric Rod. এই ক্ষেত্রে Electric Rod এর তারগুলি একটি ব্যাটারির সাথে সংযুক্ত করা হতো যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতো এবং এই রড দিয়ে তখন কয়েদীর পা ও হাতে শক দেওয়া হতো।
এছাড়াও তীব্র যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য পেটে এবং যৌনাঙ্গেও এই রড দিয়ে শক দেওয়া হতো।
এই ধরনের শকের ফলে নার্ভ সিস্টেম ড্যামেজ হয়ে যেতো,হাত ও পায়ের মাসল ড্যামেজ হতো। এছাড়াও ইলেক্ট্রিসিটির তীব্রতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ডিগ্রির বার্ন করা হতো।
এভাবে ইলেক্ট্রিক শক আপনাকে একবার দেওয়া হলে আপনি নিতে পারবেন? সেখানে তারা প্রতিনিয়ত এসব সহ্য করতো!
[৫]
৫ম ছবিতে যে অত্যাচারের পদ্ধতি দেখছেন তার নাম ❝Waterboarding torture method❞
দুইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো।
i) মাথা পানিতে ডুবিয়ে রাখা:
কয়েদীর মাথা একটি বড় পাত্র, ড্রাম, বা পানিভর্তি টবে জোর করে ডুবিয়ে রাখা হতো। নিরাপত্তাকর্মীরা নিশ্চিত করতো যে, কয়েদীর মাথা যাতে ১-২ মিনিট পানির নিচে থাকে। এবং এতে যেন শ্বাসরোধের উপসর্গ দেখা দেয় এবং শারীরিক যন্ত্রণা অনুভূত হয়।
ii) ডুবে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করা:
কয়েদীকে পিঠের উপর শুইয়ে বেঁধে রাখা হতো।আর তার পুরো মুখে ভেজা কাপড় রাখা হতো, যাতে শ্বাস নিতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। এবং কাপড়ের উপর পানি ঢালা হতো,যা বন্দীর মধ্যে ডুবে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতো এবং এটি অত্যন্ত মানসিক কষ্ট দিতো।
[৬]
৬ষ্ঠ ছবিতে যে পদ্ধতি দেখছেন সেই পদ্ধতির নাম, ❝Welcome Party torture method❞. এটাও বিশ্বে বহুল প্রচলিত।
নতুন কেউ প্রিজনে ঢুকলে তাকে মোটা কাঠের লাঠি,সিলিকন বার, প্লাস্টিক এর পাইপ দিয়ে প্রহার করা হতো। কখনো কোনো রুল ভঙ্গ করলে যেমন কথা বললে অথবা সেল পরিষ্কার না করলেও এই শাস্তি দেওয়া হতো।
[৭]
এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকম টর্চার মেথড আছে যেমন সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স হিসেবে ছিলো ধ র্ষ ণ।
শুধু মেয়ে নয়,ছেলেদেরকেও করা হতো যেটা Syrian activist Mazen Hamada এর অতীতের বিবরণ থেকে আপনারা ইতোমধ্যেই শুনে থাকবেন।
[৮]
এই পর্বগুলো পড়ার আপনাদের সবার মাথায় যে প্রশ্ন টা আসছে তা হলো, ❝সিকিউরিটি গার্ডরা এমন অত্যাচারগুলো কিভাবে করতে পারলো? তাদের কি এই অত্যাচারগুলো করতে খারাপ লাগতোনা ?❞
উত্তর হলো তাদের তো খারাপ লাগতোই নাহ বরং তারা এভাবে অত্যাচার করার কারণে আরো আনন্দ পেতো। কয়েদীদেরকে Execution room এ নেওয়ার আগে বেদম প্রহার করতো গার্ডরা। এবং একজন সাবেক গার্ড এর উক্তি ছিলো এরকম, ❝ যে কয়েদী ই আসুক না কেন তাদেরকে মারধর করা যেতে পারে,যতক্ষণ না অফিসাররা এসে পৌঁছান। আমরা আগে থেকেই জানি যে, কয়েদী মারা যাবে তাই আমরা যা ইচ্ছা তাই ই করি।❞ এই ই ছিলো তাদের বক্তব্য।
সাইকোলজির ভাষায় এই ব্যাপারটাকে বলে ❝Sadism❞ (অন্যকে কষ্ট পেতে দেখে সুখ অনুভব করা)। এমন মানসিকতা কেন তৈরি হতো?
কারণ তারা ছিল ক্ষমতাসীন শিয়া, তাই তারা সুন্নীদেরকে সাবহিউম্যান (না মানুষ) বা সহজ বাংলায় বললে যাদেরকে মেরে ফেললেও সমস্যা নেই এমনভাবে আচরণ করতো।যেমনটা আমাদের দেশে B.A.L থাকাকালীন কয়েদীদের সাথে করা হতো।
[৯]
এখানে পর্ব এক থেকে তিন পর্যন্ত যা বর্ণনা দেওয়া হলো সেগুলো শুধুমাত্র White Prison এর কয়েদীদের সাক্ষাৎকার আর সেখানকার গার্ডদের বিবরণ থেকে যে বিষয়গুলো জানা গেছে সেই পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর হচ্ছে Red Prison. যেটাকে বলা হয়ে থাকে হিউম্যান স্ল টার হাউজ। অনেকে হয়তো Red prison এর বর্ণনা জানতে চাইবেন। কিন্তু Red prison এর বর্ণনা কারা দিবে? সবাইতো মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তারা কিভাবে বর্ণনা দিবে?
এছাড়া যদি বর্ণনা দিতে হয়,তবে সেটা পারবে শুধুমাত্র সিকিউরিটি গার্ডরা আর স্টাফরা। এদের থেকে জবাবদিহিতা নেওয়া হলে তখন হয়তোবা এরা বলতে পারে। এছাড়া জানা সম্ভব ই নয় ঠিক কি পরিমাণ অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সুন্নী মুসলিমরা গেছে!
আ সা দ এবং তার হুকুম পালনকারী অত্যাচারী এবং তাকে সমর্থনকারীদের উপর আল্লাহ এর লা ন ত ব র্ষিত হোক। আমিন।
Ibtihaz Tahsin & Amir Hamza